কুরআনে রোজা সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত।

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

উচ্চারনঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কুতিবা ‘আলাইকুমসসিয়া-মু কামা-কুতিবা ‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন।

মুহিউদ্দিন খানঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

তাইসিরুল কুরআনঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।

সহিহ ইন্টারন্যাশনালঃ O you who have believed, decreed upon you is fasting as it was decreed upon those before you that you may become righteous –

— সূরাঃ আল-বাকারাহ, আয়াতঃ ১৮৩

أَيَّامًا مَّعْدُودٰتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُۥ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

উচ্চারনঃ আইয়া-মাম্মা‘দূদা-তিন ফামান কা-না মিনকুম মারীদান আও ‘আলা-ছাফারিন ফা‘ইদ্দাতুম মিন আইয়া-মিন উখারা ওয়া ‘আলাল্লাযীনা ইউতীকূনাহূ ফিদইয়াতুন তা‘আ-মু মিছকীনিন ফামান তাতাওওয়া‘আ খাইরান ফাহুওয়া খাইরুল্লাহূ ওয়া আন তাসূমূ খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম তা‘লামূন।

মুহিউদ্দিন খানঃ গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।

তাইসিরুল কুরআনঃ (রোযা) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে এবং শক্তিহীনদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদইয়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকীনকে অন্নদান করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশীতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরও উত্তম আর সে অবস্থায় রোযা পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।

সহিহ ইন্টারন্যাশনালঃ [Fasting for] a limited number of days. So whoever among you is ill or on a journey [during them] – then an equal number of other days [are to be made up]. And upon those who are able [to fast, but with hardship] – a ransom [as substitute] of feeding a poor person [each day]. And whoever volunteers good [i.e., excess] – it is better for him. But to fast is best for you, if you only knew.

— সূরাঃ আল-বাকারাহ, আয়াতঃ ১৮৪

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلٰى مَا هَدٰىكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

উচ্চারনঃ শাহরু রামাদা-নাল্লাযীউনঝিলা ফীহিল কুরআ-নু হুদাল লিন্না-ছি ওয়া বাইয়িনা-তিম মিনাল হুদা-ওয়াল ফুরকা-নি ফামান শাহিদা মিনকুমুশশাহরা ফালইয়াসুমহু ওয়া মান কা-না মারীদান আও ‘আলা-ছাফারিন ফা‘ইদ্দাতুম মিন আইয়া-মিন উখারা-ইউরীদুল্লা-হু বিকুমুল ইউছরা ওয়ালা-ইউরীদুবিকুমুল ‘উছরা ওয়ালিতুকমিলুল ‘ইদ্দাতা ওয়া লিতুকাব্বিরুল্লা-হা ‘আলা-মা-হাদা-কুম ওয়া লা‘আল্লাকুম তাশকরূন।

মুহিউদ্দিন খানঃ রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।

তাইসিরুল কুরআনঃ রমাযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোযা পালন করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার, আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।

সহিহ ইন্টারন্যাশনালঃ The month of Ramadan [is that] in which was revealed the Quran, a guidance for the people and clear proofs of guidance and criterion. So whoever sights [the crescent of] the month, let him fast it; and whoever is ill or on a journey – then an equal number of other days. Allah intends for you ease and does not intend for you hardship and [wants] for you to complete the period and to glorify Allah for that [to] which He has guided you; and perhaps you will be grateful.

— সূরাঃ আল-বাকারাহ, আয়াতঃ ১৮৫

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلٰى نِسَآئِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْـٰٔنَ بٰشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى الَّيْلِ ۚ وَلَا تُبٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عٰكِفُونَ فِى الْمَسٰجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ ءَايٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

উচ্চারনঃ উহিল্লা লাকুম লাইলাতাসসিয়া-মিররাফাছুইলা-নিছাইকুম হুন্না লিবা-ছুল্লাকুম ওয়া আনতুম লিবা-ছুল লাহুন্না ‘আলিমাল্লা-হু আন্নাকুম কুনতুম তাখতা-নূনা আনফুছাকুম ফাতাবা ‘আলাইকুম ওয়া ‘আফা- ‘আনকুম ফালআ-না বা-শিরূহুন্না ওয়াবতাগূ মা-কাতাবাল্লা-হু লাকুম ওয়া কুলূ ওয়াশরাবূ হাত্তা-ইয়াতাবাইয়ানা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদুমিনাল খাইতিল আছওয়াদি মিনাল ফাজরি ছু ম্মা আতিম্মুস সিয়া-মা ইলাল্লাইলি ওয়ালাতুবা-শিরূহুন্না ওয়া আনতুম ‘আ-কিফূনা ফিল মাছা-জিদি তিলকা হুদূদুল্লা-হি ফালাতাকরাবূহা-কাযা-লিকা ইউবাইয়িনুল্লা-হু আ-য়া-তিহী লিন্না-ছি লা‘আল্লাহুম ইয়াত্তাকূন।

মুহিউদ্দিন খানঃ রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।

তাইসিরুল কুরআনঃ তোমাদের জন্য রমাযানের রাতে তোমাদের বিবিগণের নিকট গমন করা জায়িয করা হয়েছে, তারা তোমাদের আচ্ছাদন আর তোমরা তাদের আচ্ছাদন। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর এবং তোমরা আহার ও পান করতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা হতে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায়। তৎপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর, আর মাসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।

সহিহ ইন্টারন্যাশনালঃ It has been made permissible for you the night preceding fasting to go to your wives [for sexual relations]. They are a clothing for you and you are a clothing for them. Allah knows that you used to deceive yourselves, so He accepted your repentance and forgave you. So now, have relations with them and seek that which Allah has decreed for you [i.e., offspring]. And eat and drink until the white thread of dawn becomes distinct to you from the black thread [of night]. Then complete the fast until the night [i.e., sunset]. And do not have relations with them as long as you are staying for worship in the mosques. These are the limits [set by] Allah, so do not approach them. Thus does Allah make clear His verses [i.e., ordinances] to the people that they may become righteous.

— সূরাঃ আল-বাকারাহ, আয়াতঃ ১৮৭

إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمٰتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنٰتِ وَالْقٰنِتِينَ وَالْقٰنِتٰتِ وَالصّٰدِقِينَ وَالصّٰدِقٰتِ وَالصّٰبِرِينَ وَالصّٰبِرٰتِ وَالْخٰشِعِينَ وَالْخٰشِعٰتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقٰتِ وَالصّٰٓئِمِينَ وَالصّٰٓئِمٰتِ وَالْحٰفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحٰفِظٰتِ وَالذّٰكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذّٰكِرٰتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

উচ্চারনঃ ইন্নাল মুছলিমীনা ওয়াল মুছলিমা-তি ওয়াল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-তি ওয়াল কা-নিতীনা ওয়াল কা-নিতা-তি ওয়াসসা-দিকীনা ওয়াসসা-দিকা-তি ওয়াসসা-বিরীনা ওয়াসসা-বিরাতি ওয়াল খা-শি‘ঈনা ওয়াল খা-শি‘আ-তি ওয়াল মুতাসাদ্দিকীনা ওয়াল মুতাসাদ্দিকা-তি ওয়াসসাইমীনা ওয়াসসাইমা-তি ওয়াল হা-ফিজীনা ফুরূজাহুম ওয়াল হা-ফিজা-তি ওয়াযযা-কিরীনাল্লা-হা কাছীরাওঁ ওয়াযযা-কিরা-তি আ‘আদ্দাল্লা-হু লাহুম মাগফিরাতাওঁ ওয়া আজরান ‘আজীমা-।

মুহিউদ্দিন খানঃ নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।

তাইসিরুল কুরআনঃ মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ও সত্যনিষ্ঠ নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাপালনকারী পুরুষ ও রোযাপালনারী নারী, যৌনাঙ্গের সুরক্ষাকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গের সুরক্ষাকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী- আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।

সহিহ ইন্টারন্যাশনালঃ Indeed, the Muslim men and Muslim women, the believing men and believing women, the obedient men and obedient women, the truthful men and truthful women, the patient men and patient women, the humble men and humble women, the charitable men and charitable women, the fasting men and fasting women, the men who guard their private parts and the women who do so, and the men who remember Allah often and the women who do so – for them Allah has prepared forgiveness and a great reward.

— সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াতঃ ৩৫

এই লেখা গুলোর উপর যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে দয়া করে সবাই কুরআন কে ফোলো করার জন্য অনুরোধ করা হইলো।

ইসরা ও মি‘রাজ

উম্মে হানির ঘটনা বেরিয়ে আসবে

‘ইসরা’ অর্থ নৈশ ভ্রমণ এবং ‘মি‘রাজ’ অর্থ সিঁড়ি। মক্কার মাসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তীনের বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদ পর্যন্ত বোরাক্বের সাহায্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর স্বল্পকালীন নৈশ ভ্রমণকে ‘ইসরা’ (الإِسْرَاء) বলা হয় এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস থেকে ঊর্ধ্বমুখী সিঁড়ির মাধ্যমে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকে মে‘রাজ (الْمِعْرَاج) বলা হয়। নববী জীবনে এটি ছিল এক অলৌকিক ও শিক্ষাপ্রদ ঘটনা। যার মাধ্যমে শেষনবীকে পরকালীন জীবনের সবকিছু চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করানো হয়। এর ফলে তাঁর মধ্যে যেমন বিশ্বাস ও প্রতীতি দৃঢ়তর হয় এবং হৃদয়ে প্রশান্তি জন্মে, তেমনি মুমিন হৃদয়ে পরকালীন মুক্তির জন্য উদগ্র বাসনা জাগ্রত হয়। ভবিষ্যৎ মাদানী জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতসংকুল জিহাদী যিন্দেগীতে যে দৃঢ় বিশ্বাস-এর প্রয়োজন হবে অত্যন্ত বেশী। সেকারণ অদূর ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য হিজরতের পূর্বেই আল্লাহ তাঁর নবীকে মে‘রাজের মাধ্যমে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেন। যাতে তা মাদানী জীবনে ইসলামী বিজয়ে সহায়ক হয়। পবিত্র কুরআনে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতে ‘ইসরা’ এবং সূরা নজমের ১৩ থেকে ১৮ পর্যন্ত ৬ আয়াতে মি‘রাজ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। বাকী বিশদ ঘটনাবলী সহীহ হাদীছ সমূহে বিবৃত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, سُبْحَانَ الَّذِيْ أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ ‘পরম পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রির একাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম থেকে (ফিলিস্তীনের) মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার চতুষ্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (ইসরা ১৭/১)।
উক্ত আয়াতে চারটি বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।

১. ইসরা ও মি‘রাজের পুরা ঘটনাটি রাতের শেষাংশে স্বল্প সময়ে একবার মাত্র সম্পন্ন হয়েছিল, যা ليلاً শব্দের মধ্যে বলা হয়েছে।
২. ঘটনাটি জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে ঘটেছিল, যাبِعَبْدِهِ শব্দের মাধ্যমে বলা হয়েছে। কেননা রূহ ও দেহের সমন্বিত সত্তাকে ‘আব্দ’ বা দাস বলা হয়। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নযোগে বা রূহানী কোন ব্যাপার হলে কেউ একে অবিশ্বাস করত না এবং কুরআনে তাঁকে ‘আব্দ’ না বলে হয়তবা ‘রূহ’ (بِرُوْحِ عَبْدِهِ) বলা হত। এখানে عَبْدُهُ ‘তাঁর দাস’ বলে রাসূল (সাঃ)-কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কেননা আল্লাহর দাস হওয়ার মধ্যেই মানুষের সর্বোচ্চ সম্মান নিহিত রয়েছে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, هِىَ رُؤْيَا عَيْنٍ أُرِيَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‘এটি ছিল প্রত্যক্ষ দর্শন, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখানো হয়েছিল’ (বুখারী হা/৪৭১৬)।
উল্লেখ্য যে, মক্কা থেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত ঘোড়া বা উটে যাতায়াতে দু’মাসের পথ। যা এক রাতেই ভ্রমণ করে মি‘রাজ থেকে ফিরে এসে সকাল বেলা যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লোকদের কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন, তখন সবাই একে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিল এবং তাঁকে বিভিন্নভাবে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে লাগল। অবশেষে যারা ইতিপূর্বে বায়তুল মুক্বাদ্দাস ভ্রমণ করেছেন, এমন কিছু অভিজ্ঞ লোক তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। সব প্রশ্নের যথাযথ জবাব পেয়ে তারা চুপ হল বটে। কিন্তু তাদের অবিশ্বাসী অন্তর প্রশান্ত হয়নি। পক্ষান্তরে হযরত আবুবকর (রাঃ) একথা শোনামাত্র বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং বলেন, نَعَمْ، إِنِّي لَأُصَدِّقُهُ فِيْمَا هُوَ أَبْعَدُ مِنْ ذَلِكَ، أُصَدِّقُهُ بِخَبَرِ السَّمَاءِ فِي غَدْوَةِ أَوْ رَوْحَةِ. فَلِذَلِكَ سُمِّيَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقَ ‘আমি তাকে এর চাইতে অনেক বড় বিষয়ে সত্য বলে জানি। আমি সকালে ও সন্ধ্যায় তার নিকটে আগত আসমানী খবরসমূহকে সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকি’। এ দিন থেকেই তিনি ‘ছিদ্দীক্ব’ (صِدِّيْق) বা সর্বাধিক সত্যবাদী নামে অভিহিত হতে থাকেন’।[1]
এটি অত্যন্ত বড় আশ্চর্যজনক ঘটনা ছিল। সেকারণ শুরুতে سُبْحَانَ বিস্ময়সূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। স্বপ্নের ব্যাপার হলে তো এটা মোটেই আশ্চর্যজনক হত না এবং একদল দুর্বল ঈমানদার ইসলাম ত্যাগ করে চলে যেত না। এজন্যই আল্লাহ এটাকে ‘মানুষের জন্য ফিৎনা বা পরীক্ষা স্বরূপ’ (فِتْنَةً لِلنَّاسِ) বলেছেন (ইসরা ১৭/৬০)। অর্থাৎ উক্ত ঘটনায় নও মুসলিমদের মুরতাদ হয়ে যাবার ফিৎনা। যেমন অনেকে হয়েছিল।[ইবনু হিশাম ১/৩৯৮; হাকেম হা/৪৪০৭, ৩/৬২]
৩. বায়তুল মুক্বাদ্দাস-এর আশপাশ ভূমি অর্থাৎ ফিলিস্তীন সহ পুরা সিরিয়া অঞ্চল বরকতময় এলাকা, যা بَارَكْنَا حَوْلَهُ বাক্যাংশের মাধ্যমে বলা হয়েছে। এখানে আধ্যাত্মিক বরকত হল এই যে, হযরত ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, ইলিয়াস, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ) সহ বনু ইস্রাঈলের হাযার হাযার নবীর আবাসভূমি হল এই এলাকা। আর দুনিয়াবী বরকত এই যে, শাম এলাকার মাটি মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে উর্বর ও সুজলা-সুফলা। এতদ্ব্যতীত এ অঞ্চলের অন্যান্য বরকত সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[2]
৪. আল্লাহ তাঁর শেষনবীকে পরজগতের অলৌকিক নিদর্শন সমূহের কিছু অংশ স্বচক্ষে দেখিয়ে দেন। যা لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا বাক্যাংশের মাধ্যমে বলা হয়েছে। উক্ত নিদর্শন সমূহের মধ্যে ছিল যা সহীহ হাদীছসমূহে বর্ণিত হয়েছে, যেমন (১) মক্কা থেকে বোরাকে সওয়ার হওয়ার পূর্বে সীনা চাক করা এবং তা যমযম পানি দিয়ে ধুয়ে সেখানে নূর দিয়ে ভরে দেওয়া। অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস গিয়ে সেখান থেকে ঊর্ধ্বারোহণের পূর্বে তাঁকে দুধ ও মদ পরিবেশন করা। কিন্তু রাসূল (সাঃ) দুধ গ্রহণ করেন। তখন জিব্রীল বলেন, أَصَبْتَ الْفِطْرَةَ ‘আপনি স্বভাবধর্ম প্রাপ্ত হয়েছেন’। (২) তিনি প্রথম আসমানে আদম, দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহইয়া ও ঈসা, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতুর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারূণ, ষষ্ঠ আসমানে মূসা এবং সপ্তম আসমানে ইবরাহীম (‘আলাইহিমুস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তবে আদম ও ইবরাহীম (আঃ) ব্যতীত অন্যদের আসমানের ব্যাপারে বর্ণনাগত ভিন্নতা রয়েছে। (৩) তিনি ফেরেশতাদের কলম দিয়ে লেখার খসখস আওয়ায শোনেন। (৪) ছয়শো ডানাবিশিষ্ট জিব্রীলকে তার নিজস্ব রূপে নিকট থেকে দেখেন। (৫) সিদরাতুল মুনতাহার কুলগাছ দেখেন। যার পাতাগুলি হাতির কানের মত বড় বড়। (৬) সপ্তম আসমানে বায়তুল মা‘মূর মসজিদ দেখেন। যেখানে প্রতিদিন সত্তুর হাযার ফেরেশতা সালাত আদায় করে। কিন্তু পুনরায় আর সুযোগ পায় না। (৭) হাউয কাওছার, জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেন। তিনি জান্নাতের নে‘মতরাজি ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিসমূহ প্রত্যক্ষ করেন। (৮) তাঁকে তাঁর জন্য নির্ধারিত সুফারিশের স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদ’ দেখানো হয়। (৯) সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলে চারদিকে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এরি মধ্যে আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি অহি-র মাধ্যমে কথা বলেন। অতঃপর তাঁর উম্মতের জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। পরে মূসার পরামর্শক্রমে তাঁর বারবার যাতায়াত ও উপর্যুপরি অনুরোধে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। যা পঞ্চাশ ওয়াক্তের নেকীর সমান। (১০) তিনি সরাসরি আল্লাহকে দেখেননি, তাঁর নূর দেখেছিলেন। (১১) অতঃপর তিনি নেমে আসেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে নবীগণের সালাতে ইমামতি করেন। অতঃপর বোরাকে চড়ে রাত্রি কিছু বাকী থাকতেই মক্কায় মাসজিদুল হারামে ফিরে আসেন (তাফসীর ইবনু কাছীর)।[বুখারী হা/৩৮৮৭; মুসলিম হা/১৬৪, ১৭৮; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬] পুরা ঘটনাটিই ঘটে অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে। যা ছিল মানবীয় জ্ঞানের বহির্ভূত। অথচ বাস্তব সত্য। যা মক্কার মুশরিক ও শত্রুনেতাদের দ্বারা সত্যায়িত।
উল্লেখ্য যে, অন্যান্য নবীদেরকেও আল্লাহ তাঁর কিছু কিছু নিদর্শন দেখিয়েছেন। তবে সেগুলি সব দুনিয়াতেই দেখানো হয়েছিল। যেমন ইবরাহীম (আঃ) চারটি পাখি যবহ ও টুকরা টুকরা করে মিশ্রিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি চারটি পাহাড়ে রেখে এসে বিসমিল্লাহ বলে ডাক দিতেই তাদের স্ব স্ব দেহে পুনর্জীবিত হওয়া, অতঃপর তাঁর কাছে চলে আসা (বাক্বারাহ ২/২৬০); তাঁর জন্য নমরূদের অগ্নিকুন্ড শান্তিময় স্থানে পরিণত হওয়া (আম্বিয়া ২১/৬৮-৭০); কেন‘আন থেকে মিসর যাওয়ার পথে অপহৃত স্ত্রী সারাহ-এর উপরে যালেম বাদশাহ্র হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া (বুখারী হা/২২১৭; আহমাদ হা/৯২৩০) ইত্যাদি অলৌকিক ঘটনাবলী। অন্যদিকে মূসা (আঃ)-এর আল্লাহর সাথে পবিত্র তুবা উপত্যকায় কথোপকথন ও তূর পাহাড়ে তাঁর জ্যোতি প্রদর্শন (আ‘রাফ ৭/১৪৩), অলৌকিক লাঠির মাধ্যমে নদী বিভক্ত হওয়া ও ফেরাঊন বাহিনী ডুবে মরা (শো‘আরা ২৬/৬৩-৬৬), নিজ গোত্রের ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির এলাহী গজবে মৃত্যুবরণ ও পরক্ষণেই মূসা (সাঃ)-এর দো‘আয় ও আল্লাহর হুকুমে পুনরায় জীবিত হওয়া (বাক্বারাহ ২/৫৫-৫৬) ইত্যাদি ঘটনাবলী।
ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَكَذَلِكَ نُرِيْ إِبْرَاهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِيْنَ ‘আর এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আসমান ও যমীনের রাজত্ব প্রদর্শন করেছি। যাতে সে দৃঢ়বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়’ (আন‘আম ৬/৭৫)। অনুরূপভাবে মূসা (আঃ)-কে দেখানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, لِنُرِيَكَ مِنْ آيَاتِنَا الْكُبْرَى ‘যাতে আমি তোমাকে বড় বড় কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি’ (ত্বোয়াহা ২০/২৩)। সবশেষে শেষনবী (সাঃ)-কে সপ্তাকাশের উপরে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে আল্লাহ তাঁকে পরজগতের অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করালেন এবং বললেন, لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ‘এটা এজন্য, যাতে আমি তাকে কিছু নিদর্শন প্রত্যক্ষ করাই’ (ইসরা ১৭/১)।
এভাবে মে‘রাজের মাধ্যমে আল্লাহ শেষনবীর মধ্যে ‘আয়নুল ইয়াক্বীন’ অর্থাৎ প্রত্যক্ষ দর্শনলব্ধ দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করেন। যা অন্য কোন নবীর বেলায় করেননি। নিঃসন্দেহে এটি ছিল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দলীল। সেই সাথে এটি ছিল বিশ্বাসীদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلاَّ فِتْنَةً لِلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلاَّ طُغْيَانًا كَبِيرًا-(الإسراء 60)-
‘আর আমি তোমাকে (মে‘রাজের রাতে) যে দৃশ্য দেখিয়েছি এবং কুরআনে বর্ণিত যে অভিশপ্ত (যাক্কুম) বৃক্ষ দেখিয়েছি, তা ছিল কেবল মানুষের (ঈমান) পরীক্ষার জন্য। আমি তাদের ভীতি প্রদর্শন করি। অতঃপর এটা তাদের বড় ধরনের অবাধ্যতাই কেবল বৃদ্ধি করে’ (ইসরা ১৭/৬০)।


মে‘রাজের তারিখ (تاريخ المعراج) :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
এ সম্পর্কে বিদ্বানগণের মধ্যে ছয় প্রকার মতভেদ পরিদৃষ্ট হয়। যথা- (১) ১ নববী বর্ষেই মে‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল (২) ৫ নববী বর্ষে (৩) ১০ নববী বর্ষের ২৭শে রজব তারিখে (৪) ১২ নববী বর্ষের রামাযান মাসে (৫) ১৩ নববী বর্ষের মুহাররম মাসে (৬) ১৩ নববী বর্ষের রবীউল আউয়াল মাসে (আর-রাহীক্ব ১৩৭ পৃঃ)।
উপরোক্ত ছয়টি মতামতের মধ্যে প্রথম চারটি গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তৃতীয় মতটিই উপমহাদেশে প্রচলিত আছে। কারণ, এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত যে, উম্মুল মুমেনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এটাও সকল বিদ্বান কর্তৃক স্বীকৃত যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১০ নববী বর্ষের রামাযান মাসে। অতএব মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে একথা একপ্রকার নিশ্চিতভাবেই বলা চলে। এক্ষণে শেষের তিনটি মতামতের মধ্যে কোনটিতেই নিশ্চিত হবার উপায় নেই। তবে সূরা ইসরার শুরুতে মে‘রাজ সম্পর্কিত বর্ণনার পরপরই বনু ইস্রাঈলের অধঃপতন সম্পর্কিত বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, ঈমানী বিশ্বে বনু ইস্রাঈলের দীর্ঘ নেতৃত্বের অবসান এবং মুহাম্মাদী নেতৃত্বের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। অর্থাৎ হিজরতের প্রাক্কালে মাক্কী জীবনের শেষপ্রান্তে মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল। যা ১৩ নববী বর্ষের যেকোন এক রাতে হয়েছিল বলে একপ্রকার নিশ্চিতভাবে বলা যায়। অতঃপর হিজরত শুরু হয়েছিল ১৪ নববী বর্ষের ২৭শে ছফর বৃহস্পতিবার।
মে‘রাজের সঠিক তারিখ উম্মতের নিকটে অস্পষ্ট রাখার তাৎপর্য সম্ভবতঃ এই যে, তারা যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত উম্মতগুলির ন্যায় অনুষ্ঠানসর্বস্ব না হয়ে পড়ে। বরং মে‘রাজের তাৎপর্য অনুধাবন করে আখেরাতে জবাবদিহিতার ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। অতঃপর মে‘রাজের অমূল্য তোহ্ফা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে গভীর অধ্যাত্ম চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা করে।
আল্লাহ ইচ্ছা করলে মক্কা থেকেই সরাসরি মে‘রাজ করাতে পারতেন। কিন্তু মক্কা থেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস নিয়ে এসে সেখান থেকে মে‘রাজ করানোর মধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবরাহীমী দাওয়াতের দু’টি প্রধান কেন্দ্র কা‘বা ও বায়তুল মুক্বাদ্দাস দুই স্থানের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব এখন থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর উম্মতের উপরেই ন্যস্ত করা হবে। যা উমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ১৫ হিজরী সনে সম্পন্ন হয় এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও পাশ্চাত্য বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য বাহির থেকে ইহূদীদের এনে ফিলিস্তীনের একাংশ থেকে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা মুসলমানদের বের করে দিয়েছে এবং সেখানে ইহূদীদের যবরদস্তি বসিয়ে দিয়ে তাকে ‘ইস্রাঈল রাষ্ট্র’ নাম দিয়েছে ১৯৪৮ সালে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অস্থায়ী বিষয়। যার সত্বর অবসান হবে ইনশাআল্লাহ।
অতএব ইসলামী দাওয়াতের প্রথম পর্যায় মাক্কী জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ইয়াছরিবে হিজরতের প্রাক্কালে মে‘রাজ হয়েছিল বলা চলে। অর্থাৎ দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নববী বর্ষের যিলহাজ্জ মাসে অনুষ্ঠিত ১ম ও ২য় বায়‘আত অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী কোন এক রজনীতে মে‘রাজ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। তবে আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
অতএব মে‘রাজ ছিল ইসলামী বিজয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এবং মাদানী জীবনের নব অধ্যায়ের সূচক ঘটনা।




[1]. হাকেম হা/৪৪০৭, ৩/৬২; সহীহাহ হা/৩০৬; ইবনু ইসহাক বলেন, এ সময় রাসূল (সাঃ) তাকে ‘ছিদ্দীক্ব’ বলে অভিহিত করেন।-قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي بَكْرٍ: وَأَنْتَ يَا أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقُ، فَيَوْمَئِذٍ سَمَّاهُ الصِّدِّيقَ (ইবনু হিশাম ১/৩৯৯)। হাদীছ সহীহ, সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৯২)।
[2]. দ্রঃ মিশকাত ‘মানাক্বিব’ অধ্যায়-৩০ ‘ইয়ামন, শাম ও ওয়ায়েস ক্বারনীর বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ-১৩।

মেয়েদের জন্য ১৫ হাদিস

বোনদের জন্য ১৫ টি হাদিস :-

১.দেবর মৃত্যু সমতুল্য। (মৃত্যু থেকে মানুষ যেভাবে পলায়ন বা সতর্কতা অবলম্বন করে এক্ষেত্রে তাই করতে হবে)
(বুখারী শরীফ ৫২৩২, মুসলিম শরীফ ২১৭২, তিরমিযী শরীফ ১১৭১)

২.কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিযী শরীফ ১১৭১)

৩.তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্ত শিরায় প্রবাহিত হয়। (তিরমিযী শরীফ ১১৭২)

৪.কোন অবৈধ নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে মাথায় লোহার পেরেক পুঁতে যাওয়া ভালো।
(আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২২৬)

৫.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী যাদেরকে আমি দেখিনি। তারা ভবিষ্যতে আসবে। প্রথম শ্রেণী হবে একদল অত্যাচারী, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক যার দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সে নারীর দল, যারা কাপড় পরিধান করবে কিন্তু তবুও তারা উলঙ্গ অবস্থায় থাকবে, নিজেরা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যদেরকেও তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, যাদের মস্তক (খোঁপা বাধার কারণে) উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ বহু দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।”
(মুসলিম শরীফ ২১২৮ )

৬.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের বাহিরে দেখতে পান যে, নারীরা রাস্তায় পুরুষের সাথে মিশে গেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর, কারণ, তোমাদের জন্য রাস্তার মাঝে হাটা উচিত নয়, তোমাদের জন্য হল রাস্তার পাশ। এ কথা শোনে নারী দেয়াল ঘেঁসে হাটা শুরু করে তখন দেখা গেল তাদের অনেকের কাপড় দেয়ালের সাথে মিশে যেত।
(আবু দাউদ শরীফ ৫২৭২)

৭.কোন মহিলা যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর না করে, তার নিকট যেন মাহরাম ছাড়া কোনো বেগানা পুরুষ প্রবেশ না করে, এ কথা শোনে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি অমুক অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সৈন্য দলে নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন এখন আমি কি করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তর দিলেন তুমি তার সাথে বের হও। (বুখারী শরীফ ১৮৬২)

৮.নারী গোপন জিনিস, সুতরাং যখন সে(বাড়ি হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয় করে দেখায়। (তিরমিযী শরীফ ১১৩৭)

৯.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে, “আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি।” (তিরমিযী ২৭৭৯)

১০.প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।
এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায কবুল হবে না।”
(সহীহ আল-জামে আস-সগীর আযযিয়াদাতুহ ২৭০)

১১.আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চোখের ব্যভিচার হল দৃষ্টি, দুই কানের ব্যভিচার হল শ্রবণ, মুখের ব্যাভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা এবং পায়ের ব্যভিচার হল খারাপ উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া। আর অন্তর আশা ও আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। লজ্জা স্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (মুসলিম শরীফ ২৬৫৭)

১২.যে নারী স্বগৃহ, স্বামীগৃহ বা মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) সে তার ও তার রবের মধ্যকার পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেয়। (তিরমিযী শরীফ ২৮০৩)

১৩.কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃষ্টিপাত করো না। বরং নজর অতিসত্তর ফিরিয়ে নিও, কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়। (আহমাদ শরীফ ১৩৬৯)

১৪.নারীদের বেশ ধারী পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশ ধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। (ইবনে মাজাহ শরীফ ১৯০৪)

১৫.যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে। (সহীহ আল-জামিউস সাগীর ২৭০৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে,যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা!!
(সহীহ মুসলিম শরীফ)

আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন মা বোনদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন,আমিন। 🌺🖤
C

আমরা যারা মুসলিম আছি এবং নামাজ পড়ি নামাজের দোয়ার কি বলা হয় আমরা কি সবাই জানি। যদি না জেনে থাকি তাহলে সবাই জেনে নিই.

১ ) নামাজে দাড়িয়েই প্রথমে আমরা বলি,”আল্লাহু আকবার”
অর্থ – আল্লাহ্ মহান!

২ ) তারপর পড়ি সানা । সানায় আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি নিজের জন্য দুয়া করি।
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা
ওয়াতাবারাকাস্মুকা ওয়া তা’আলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি পাক-পবিত্র , তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ , তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।

৩ ) তারপর আমরা শয়তানের প্রতারনা থেকে আশ্রয় চাই এবং বলি, “আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজিম”
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৪ ) আল্লাহর পবিত্র নাম দিয়ে আল্লাহর দয়া করুণার গুন দিয়ে নামাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। এবং বলি, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
অর্থঃ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।

৫ ) এরপর আমরা সূরা ফাতেহা দিয়ে নামাজ শুরু করি (২ রাকাত/৩ রাকাত/৪ রাকাত , ফরয/সুন্নতের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়ি )

৬ ) আমরা রুকুতে আল্লাহ্ -র উদ্দেশ্যে শরীর অর্ধেক ঝুঁকিয়ে দিয়ে মাথা নুয়িয়ে দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করি এবং ক্ষমা চাই, ৩/৫/৭ বার বলি, “সুবাহানা রাব্বি-আল আজিম”/ সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ওয়া বিহামদিহি
অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি ।

৭ ) তারপর রুকু থেকে উঠে আমরা বলি,
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদা”
অর্থ : আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে ।
তারপর পরই আমরা আবার আল্লাহর প্রশংসা করে বলি, “আল্লাহুম্মা “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ”
অর্থ : হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল তোমারই।

৮ ) তারপর আমরা সমস্ত শরীর নুয়িয়ে দিয়ে মাথাকে মাটিতে লুটিয়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট সিজদা দেই।
বি: দ্র: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন।
“৩/৫/৭ বার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”
অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি

৯ ) দুই সিজদার মাঝখানে আমরা বলি, “আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ার হামনী, ওয়াহদীনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াআ’ফিনী, ওয়ার-ঝুকনী, ওয়ারফা’নী”
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে শান্তি দান কর এবং আমাকে রিজিক দাও ।

১০ ) এভাবে নামাজ শেষে , মধ্য (২ রাকাত , ৪ রাকাত ভিত্তিতে ) বৈঠক আর শেষ বৈঠকে তাশাহুদে, আল্লাহর প্রশংসা করি । রাসুল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পেশ করে নিজেদের জন্য দুয়া করি । দুআ মাসুরা পড়ি ।

তাশাহুদ :
“আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু”
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি,আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল”

দুরুদ :
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি
ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ,
অাল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”
অর্থ:-হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও উনার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।

দুআ মাসুরা :
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি যুলমান কাছিরা, ওয়ালা ইয়াগ ফিরূজ যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার উপর অত্যাধিক অন্যায় করেছি গুনাহ করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু।

১১ ) ২ কাঁধে সালাম দিয়ে আমরা
নামাজ শেষ করি ।

আল্লাহ নামাজে আমরা কি পড়ি তার অর্থ বোঝার তৌফিক দান করুন। আমীন ❤

স্বারা বিশ্বে ইসলামিক আইন?

শরিয়ত (আরবি: شريعة‎‎‎, আরবি উচ্চারণ: [ʃaˈriːʕa] শারি’আহ্ বা শারি’আত; “কর্মপদ্ধতি”) বা ইসলামি আইন বা শরিয়ত আইন হচ্ছে জীবনপদ্ধতি ও ধর্মীয় আইন যা ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি অনুষঙ্গ। ইসলামি পরিভাষাকোষ অনুযায়ী, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং নবি হযরত মুহাম্মাদ(সঃ) যেসব আদেশ-নিষেধ, নিয়ম-নীতি ও পথনির্দেশনা মুসলমানদের জন্য প্রদান করেছেন, তার সমষ্টিই হচ্ছে শরিয়ত। এটি ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন হতে উৎসরিত, প্রধানত কুরআন ও হাদিস হতে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে যথাক্রমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদে(সঃ) এর দিক নির্দেশনার উৎস। আরবিতে, স্রষ্টার অমোঘ স্বর্গীয় আইন বুঝাতে শরিয়ত শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

শরিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

অতঃপর আমি আপনাকে [মুহাম্মাদকে (সাঃ)] কর্মপদ্ধতির উপর (শরিয়তের উপর) প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং আপনি তাই অনুসরণ করুন; আর আপনি মূর্খদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না।’ [সুরাতুল জাসিয়া:১৮]

আরবি ভাষায় শরীয়া বলতে পথ বোঝায়। আল্লাহকে খুশি করার লক্ষ্যে মানুষের জন্য অনুকরণীয় আচরণবিধি। শরীয়া বলবৎ হলে ব্যক্তি, মানুষ ও সমাজের সকল ক্ষেত্র শরীয়তের অনুশাসন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। শরীয়তের আওতায় ব্যবসায়-বাণিজ্য, পারিবারিক আইন, নৈতিকতা, অপরাধ ও শাস্তি, দান-খয়রাত সহ সবই রয়েছে। প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ আইনের চেয়ে এই ইসলামী শরীয়তের বিধানগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত।

শরিয়ার ভূমিকা বিশ্বজুড়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। উত্তর আমেরিকার কিছু বিচারব্যবস্থা শরিয়া ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা পাস করেছে, যা ধর্মীয় বা বিদেশী আইনের উপর বিধিনিষেধ হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। শরিয়া গণতন্ত্র, মানবাধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা, নারীর অধিকার, এলজিবিটি অধিকার এবং ব্যাংকিংয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিয়ে চলমান বিতর্ক রয়েছে। স্ট্রাসবার্গে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ECtHR) বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে রায় দিয়েছে যে শরিয়া “গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির সাথে বেমানান”।

উৎস

মূল নিবন্ধ: শরিয়তের উৎস

শরিয়ত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর দিকনির্দেশনার সমষ্টি। অতএব, শরিয়তের প্রধান বা মৌলিক উৎস দুইটি। যথা- আল্লাহর বাণী কুরআন ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতি (সুন্নাহ)। পরবর্তীতে কুরআন ও সুন্নাহর স্বীকৃতি ও নির্দেশনার ভিত্তিতে শরিয়তের আরো দুইটি বিষয় নির্ধারিত হয়। এগুলো হলো- ইজমা ও কিয়াস। সুতরাং, শরিয়তের উৎস মোট চারটি।

  1. কুরআন
  2. সুন্নাহ
  3. ইজমা
  4. কিয়াস

বিষয়বস্তু ও পরিধি

মূল নিবন্ধ: ইসলামি অপরাধ আইনশাস্ত্র

ইসলামি কর্মপদ্ধতি বা শরিয়তের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। সকল ধরনের ইসলামি আইন, আদেশ-উপদেশ, বিধিনিষেধ ও অনুশীলনের উৎস হলো শরিয়ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন:

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম (অর্থাৎ শরিয়তে আল্লাহ কর্তৃক সকল বিষয়বস্তু সংযোজন সম্পন্ন হলো), তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের [একমাত্র] ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। [সুরাতুল মায়িদা:৩]

যে শরিয়তের বিষয়বস্তুর পরিধি এতটা ব্যাপক, যে তা দীর্ঘ ২৩ বছরে পরিপূর্ণ হয়েছে (যেহেতু মুহাম্মাদ (সঃ) এর নবুয়ত দীর্ঘ ২৩ বছরে সম্পন্ন হয়েছে)। ইসলামি ধর্ম বিশারদগণ শরিয়তের বিষয়বস্তুকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন-

  • আকিদা বা বিশ্বাসগত বিধিবিধান (আকাাইদ)।
  • নৈতিকতা ও চরিত্র সম্পর্কিত নিয়মনীতি (তাসাওউফ)।
  • বাস্তব কাজকর্ম সংক্রান্ত নিয়মকানুন (ফিক্বাহ)।

ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামি আইনশাস্ত্রে চারটি উৎসকে শরিয়তের স্বীকৃত উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন, সুন্নাহ, কিয়াস ও

ইজমা। বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মাযহাব হানাফিমালিকীশাফিঈহাম্বলীজাফরি ইত্যাদি মতবাদে শাস্ত্রীয় উৎস সমূহ হতে শরিয়তের আইন নির্ণয়ের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, তা ইজতিহাদ নামে পরিচিত। নৈতিকতা ও চারিত্রিক নিয়মনীতি সংক্রান্ত বিধিবিধান দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা মুহলিকাত সমর্পিত নীতি ও মুনজিয়াত সমর্পিত নীতি। ব্যবহারশাস্ত্র বা ফিকহশাস্ত্রে শরিয়তের আইনসমূহকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকে। এ দুটি বিভাগ হচ্ছে ইবাদত সম্পর্কিত নীতি এবং মুয়ামালা সম্পর্কিত নীতি। শরিয়ত-ভিত্তিক আইনে কোন কর্ম সংঘটনকে বিচারিক বিশ্লেষণ করতে আইনগত অবস্থার পাশাপাশি নৈতিক মানদন্ডেও বিবেচনা করা হয় এবং এ কারণে শরিয়তের সিদ্ধান্তসমূহ ফরজ (আবশ্যিক), ওয়াজিব (প্রণোদনামূলক), নফল (নিরপেক্ষ), হালাল (গ্রহণীয়), হারাম (নিষিদ্ধ), – এই পাঁচ শ্রেণির যে কোন একটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এ কারণে, শরিয়তের সিদ্ধান্তসমূহের কিছু কিছু ক্ষেত্র পাশ্চাত্যের আইনশাস্ত্রের সিদ্ধান্তসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহ, বিশেষত প্রাত্যহিক জীবনাচার সম্পর্কিত বিষয়গুলো স্রষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

গুরুত্ব

ইসলামি আদর্শ মোতাবেক, শরিয়ত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) প্রদত্ত আদেশ-নিষেধ ও বিধি- বিধান। সুতরাং শরিয়ত মেনে চললে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) খুশি হন। অন্যদিকে, শরিয়ত অস্বীকার করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর আদর্শ ও অস্তিত্বকে অস্বীকার করার নামান্তর। এমনকি শরিয়তের এক অংশ পালন করা আর অন্য অংশ অস্বীকার করা কুফর। কুরআনে আছে,

তবে কি তোমরা গ্রন্থের (কুরআন) কিছু অংশ বিশ্বাস করো, আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো? তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল হলো পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। আর মহাপ্রলয়ের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। [সুরাতুল বাকারা, আয়াত ৮৫]

অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত মানতে হবে। আর তা হলো সর্বমোট ৪০টি ফরজ বিধান। যথাঃ ইবাদত দশটি যেমনঃ ইলম, আকাইদ, তাহারাত, নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্জ্ব, তিলাওয়াতে কুরআন, জিকির ও দোয়া এবং তারতীবুল আওরাদ। মুয়ামালাত দশটি যথাঃ খানাপিনা, নিকাহ(পর্দা), রোজগার, হালাল-হারাম, দোস্তি-সোহবাদ, নির্জন বাস, সফর, পিতা-মাতা ও সন্তানের হক, আত্মীয়-স্বজন (এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, পথিক, ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, রাজনীতি গং ও অন্যান্য যাবতীয় সৃষ্টির হক) এবং পীর (মোর্শেদ) ও মুরিদের হক। মুহলিকাত দশটি যথাঃ কিবর, হাসাদ, বোগজ, গজব, গীবত, হেরজ, কেজব, বোখল, রিয়া এবং গুরুর। মুনজিয়াত দশটি যথাঃ তাওবাহ, ছবর, শোকর, তাওয়াক্কুল, ইখলাস, খওফ, রজা, মুহাব্বাত, মুরাকাবা এবং মুহাছাবা।

শরিয়তের প্রায়োগিক দিক

শরীয়তের আওতা পরিব্যাপ্ত। ব্যবসায়-বাণিজ্য, পারিবারিক আইন, নৈতিকতা, অপরাধ ও শাস্তি, দান-খয়রাত সহ অনেক কিছুর জন্যই শরিয়তের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের সংক্রান্ত বিধানগুলোর চাবিকঠি হলো কোনো ব্যবসায়ের সকল অংশীদারদের মধ্যে ন্যায্যতা ও পারস্পরিক আস্থা। ক্রেতাকে ঠকানো কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। শরীয়ত মোতাবেক সুদের বিনিময়ে অর্থ ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ। মর্টগেজও নিষিদ্ধ। সাধারণভাবে বীমা ব্যবস্থাও নিষিদ্ধ যদিও সমান ঝুঁকি আছে এমন কিছু তহবিলের অনুমোদন রয়েছে। লগ্নির অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই এমন চুক্তি শরিয়তে নিষিদ্ধ। পণ্যের মধ্যে জুয়া, শূকর বা মদ ইত্যাদির ব্যবসায় নিষিদ্ধ।

ইসলামে নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেও নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার মধ্যে প্রায়োগিক পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ ও নারীর বয়োঃপ্রাপ্তি ও বিয়ের বয়স শরীয়তে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিয়ের বিধানের ক্ষেত্রে একজন পুরুষরা সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারে এই শর্তে যে সকল স্ত্রীর প্রতি সে সমতাভিত্তিক আচরণ করবে। স্বামী একপাক্ষিকভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। বিবাহ বহির্ভূত কোনো প্রকান যৌনক্রিয়া ইসলাম অনুমোদন করে না। তাই পারিপার্শ্বিক কারণে বিবাহ সম্ভব না-হলে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যৌনদাসী ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ।

শরীয়তের বিধানে কিছু কিছু অপরাধের জন্য কঠোর সাজার বিধান রয়েছে। যেমন, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’র বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে (হুদুদ) পাথর ছুড়ে মৃত্যু, জিনা বা ব্যভিচারের অপরাধে ১০০ বার বেত্রাঘাত এবং চুরির জন্য হাত কব্জি অবধি কেটে ফেলা। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকাশ্যে শাস্তি প্রদানের রীতি রয়েছে। । তবে সাজাশরীয়া আইনে অপরাধ প্রমাণের মানদণ্ড অনেক কঠোর। যেমন, জিনা বা ব্যভিচারের এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার জন্য অন্তত চার জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য প্রয়োজন। হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের শাস্তির ভিত্তি ‘চোখের বদলে চোখ’ নীতি। কিন্তু ইসলাম মুসলমানদের ক্ষমাপ্রবণ হতে উৎসাহিত করে। কার্যত হন্তারককে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে হত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে উৎসাহিত করা হয়।